আধুনিক বাংলা বানান

 আবার খিস্তি খাব...

•বেশ কয়েক মাস আগে ফেসবুক এবং ব্লকে একটি লেখা পোস্ট করে নানান খিস্তি খেয়েছিলাম। সাংবাদিকদের খিস্তি খাওয়া অভ্যেস রয়েছে। কারণ, বিতর্কিত বেশিরভাগ খবরই একটা পক্ষের বিরুদ্ধে যায়। তখনই সাংবদিকদের গুষ্টিসুদ্ধ উদ্ধার হয়ে যায়। যখন সংবাদপত্রে সেই খবর প্রকাশিত হয় তখন মন্তব্য করার জায়গা থাকে না তাই সেটাকে নিয়ে চায়ের টেবিলে সমালোচনা হয়। আর সোশ্যাল মিডিয়া হলে  লাগামহীন ভাষায় সরাসরি মন্তব্য।
যে লেখাটি নিয়ে বেশ কিছু দিন খিস্তি খেয়েছিলাম সেটি হল, অ্যাডে ক্লিক করে টাকা আয়। লেখাটি পোস্ট করার সঙ্গে-সঙ্গে ওই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিরাও খিস্তির পাশাপাশি আমাকে হুমকিও দিতে ছাড়েননি।
সম্প্রতি আবার একটি অ্যাড বেরিয়েছে। সেটা থেকেও নাকি মাসে বেশ কয়েক হাজার টাকা করে আয় করা যায়। সময়ের অভাবে লেখা শেষ করা গেল না

কিন্তু আমার কয়েকটা প্রশ্ন:

➥যদি সেখান থেকে মোটা টাকাই আয় করা যাবে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে কেন? তারাই তো দু-চার সপ্তাহ বিনে পারিশ্রমিকে খাটিয়ে নিয়ে তবে হাতে টাকা দেওয়া শুরু করতে পারত?

➥যেখানে গুগলের মতো এত বড় কোম্পানির অ্যাড সেন্সের অ্যাড ক্লিক করার জন্য প্রতি ক্লিকের জন্য একটাকারও অনেক কম পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ওই সমস্ত সংস্থাগুলি কী করে এত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে?

➥বিজ্ঞাপনের ক্লিক করার প্রেক্ষিতে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল অনেকগুলি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে। সেই ওয়েব সাইটে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনটি কতক্ষণ খোলা রয়েছে। কোন আই পি অ্যাড্রেস থেকে কতবার ক্লিক করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ক্লিক করা হচ্ছে না কি সত্যি পণ্যটি বা বিজ্ঞাপনটি দেখার জন্য ক্লিক করা হচ্ছে— এসব দেখার পরই টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এই সমস্ত ক্ষেত্রে এতসব দেখা হয় না। একই আইপি থেকে বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞাপনের লিঙ্কটি ক্লিক করলেই নাকি বহু টাকা আয় করা যাচ্ছে। যেটা কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নয়।

➥ অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।মনে করা যাক, •ClearTrip •Amazon •FlipKart •TATACliQ •Myntra •ShopClues মতো কোম্পানিগুলি তাঁদের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন। তাঁরা চাইছেন প্রচুর মানুষ বিজ্ঞাপনগুলি দেখে তাঁদের পণ্য বা মেসেজের প্রতি আকৃষ্ট হোক। বোঝানোর সুবিধের জন্য এই সমস্ত বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিগুলিকে ‘A’ ধরছি। যে কোম্পানি এদের বিজ্ঞাপন প্রচারের চুক্তি নিয়েছেন এবং আপনাদের ক্লিক করার জন্য কাজে নিয়েছেন তাঁদেরকে ‘B’ ধরছি। এবং আপনারা যাঁরা ক্লিক করে টাকা আয় করার কাজে লেগেছেন তাঁদেরকে ‘C’ ধরছি।

এবার ব্যাখ্যায় আসি, ‘C’ ক্লিক করছেন তাঁরা টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু মূল টাকা কারা সেই টাকা জোগান দিচ্ছে? দিচ্ছে ‘A’। —হিসেব মতো ‘A’-দের বিজ্ঞাপনকে ক্লিক করা হচ্ছে। তাদের বিজ্ঞাপন তথা কোম্পানির পণ্যের প্রচার হওয়ার জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা ‘B’-কে অর্থাৎ আপনারা যে কোম্পানিতে ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন বা নাম লিখিয়েছেন তাদেরকে দেবে। সেই টাকার একটা ন্যূনতম অংশ আপনাদেরকে (‘C’, মানে যাঁরা বাড়িতে বসে ক্লিক করার কাজে নাম লিখিয়েছেন) তাঁদেরকে দেবে। ■প্রশ্ন? যে সব কোম্পানির(‘A’) বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য আপনারা(‘C’) টাকা পাচ্ছেন সেই কোম্পানিগুলি(‘A’) কি এতটাই মূর্খ বা বোকা যে তাদের উদ্দেশ্য সফল হোক বা না হোক শুধু মাত্র বিজ্ঞাপন ক্লিক করলেই তারা মোটা টাকা দিয়ে দেবে? এটা কি বাস্তবে সম্ভব, কোম্পানির পণ্য বা তাদের দেওয়া মেসেজের প্রচার হোক বা না হোক সেই কোম্পানির অ্যাডে ক্লিক করলেই টাকা পাওয়া যায়? যে কোম্পানিগুলি(‘A’) বিজ্ঞাপনের প্রচারের জন্য এত হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করছে তাদের কি টেকনিক্যাল বিষয়টি (মানে, বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ‘B’ কোম্পানিগুলি তাদেরকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে সেটা তারা বুঝতে পারবে না) দেখার মতো কোনও পদ্ধতি নেই?

➥বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি (‘B’) বাজার ধরার জন্য প্রথমের দিকে সমস্ত ক্লায়েন্টদেরই(‘C’) ওই সস্তার নিয়মে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে টাকা দিয়ে দেয়। যখন দেখে, প্রচুর মানুষের কাছ থেকে(‘C’) সিকিউরিটি মানি বাবদ প্রচুর টাকা কোম্পানির(‘B’) ঘরে চলে গিয়েছে তখনই এই ধরনের কোম্পানিগুলির(‘B’) হদিশ পাওয়া যায় না।

💬কাজলকান্তি কর্মকার || রাজ্যের প্রথম শ্রেণীর একটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক

ঘাটাল || পশ্চিম মেদিনীপুর
M&W: 9933066200
eMail: ghatal1947@gmail.com
FB:  https://www.facebook.com/kajalkanti.karmakar

Popular posts from this blog

DigiPIN ডিজিপিন—নতুন ভারতের ঠিকানা!

রবীন্দ্র কৌশিক: ভারতের অবহেলিত বীর #Ravindra Kaushik

আগামী দিনে ‘যৌনকর্মী’ শব্দটা কি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে? #Prostitute