সহজে ধনী হওয়ার নেশা এখনও কমেনি আমাদের...

কিছু প্রশ্ন: অনলাইনের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে টাকা আয়
কাজলকান্তি কর্মকার (সাংবাদিক, ঘাটল মহকুমা•পশ্চিম মেদিনীপুর•মো: ৯৯৩৩০৬৬২০০) •সম্প্রতি বাজারে আবার একটি চমক এসেছে ‘অনলাইনে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে মোটা টাকা আয়’। অনলাইনে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে যে টাকা আয় হয় না — তা আমি বলছি না, কারণ গুগলের অ্যাড সেন্স থেকে অনেকেই প্রচুর টাকা আয় করেন। তার জন্য অবশ্য আপনাকে, মানে যিনি টাকা আয় করছেন তাঁকে কোনও টাকা বিনিয়োগ করতে হয় না। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল বা ওয়েব সাইট থাকলে এবং ন্যূনতম কয়েকটি শর্ত পূরণ করলেই অনলাইন থেকে টাকা আয় হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বাজারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব হয়েছে যারা দাবি করছে, বাড়ি থেকেই অনলাইনে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে প্রচুর টাকা আয় করা যাবে। ওই আয় করতে হলে, তাদেরকে এককালীন মোটা টাকা (ক্ষেত্র বিশেষে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা) সিকিউরিটি মানি জমা দিয়ে আইডি বা সদস্যপদ নিতে হবে। এই অনলাইনে কাজ করে নাকি অনেকে ‘প্রচুর’(?!) টাকা আয় করেছে সেটাও নাকি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সেমিনারে বলা হচ্ছে। কে কত চেক পেয়েছেন তার তথ্যও সেমিনারে দেখানো হচ্ছে। … মানুষকে টাকার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তাই কেউ যদি নেটে ক্লিক করে টাকা আয় করতে পারেন সেটা খুব সুখকর সংবাদ।
কিন্তু আমার কয়েকটা প্রশ্ন:
যদি সেখান থেকে মোটা টাকাই আয় করা যাবে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে কেন? তারাই তো দু-চার সপ্তাহ বিনে পারিশ্রমিকে খাটিয়ে নিয়ে তবে হাতে টাকা দেওয়া শুরু করতে পারত?
যেখানে গুগলের মতো এত বড় কোম্পানির অ্যাড সেন্সের অ্যাড ক্লিক করার জন্য প্রতি ক্লিকের জন্য একটাকারও অনেক কম পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ওই সমস্ত সংস্থাগুলি কী করে এত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে?
বিজ্ঞাপনের ক্লিক করার প্রেক্ষিতে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল অনেকগুলি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে। সেই ওয়েব সাইটে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনটি কতক্ষণ খোলা রয়েছে। কোন আই পি অ্যাড্রেস থেকে কতবার ক্লিক করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ক্লিক করা হচ্ছে না কি সত্যি পণ্যটি বা বিজ্ঞাপনটি দেখার জন্য ক্লিক করা হচ্ছে— এসব দেখার পরই টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এই সমস্ত ক্ষেত্রে এতসব দেখা হয় না। একই আইপি থেকে বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞাপনের লিঙ্কটি ক্লিক করলেই নাকি বহু টাকা আয় করা যাচ্ছে। যেটা কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নয়।

➥ অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।মনে করা যাক, •ClearTrip •Amazon •FlipKart •TATACliQ •Myntra •ShopClues মতো কোম্পানিগুলি তাঁদের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন। তাঁরা চাইছেন প্রচুর মানুষ বিজ্ঞাপনগুলি দেখে তাঁদের পণ্য বা মেসেজের প্রতি আকৃষ্ট হোক। বোঝানোর সুবিধের জন্য এই সমস্ত বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিগুলিকে ‘A’ ধরছি। যে কোম্পানি এদের বিজ্ঞাপন প্রচারের চুক্তি নিয়েছেন এবং আপনাদের ক্লিক করার জন্য কাজে নিয়েছেন তাঁদেরকে ‘B’ ধরছি। এবং আপনারা যাঁরা ক্লিক করে টাকা আয় করার কাজে লেগেছেন তাঁদেরকে ‘C’ ধরছি।
এবার ব্যাখ্যায় আসি, ‘C’ ক্লিক করছেন তাঁরা টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু মূল টাকা কারা সেই টাকা জোগান দিচ্ছে? দিচ্ছে ‘A’। —হিসেব মতো ‘A’-দের বিজ্ঞাপনকে ক্লিক করা হচ্ছে। তাদের বিজ্ঞাপন তথা কোম্পানির পণ্যের প্রচার হওয়ার জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা ‘B’-কে অর্থাৎ আপনারা যে কোম্পানিতে ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন বা নাম লিখিয়েছেন তাদেরকে দেবে। সেই টাকার একটা ন্যূনতম অংশ আপনাদেরকে (‘C’, মানে যাঁরা বাড়িতে বসে ক্লিক করার কাজে নাম লিখিয়েছেন) তাঁদেরকে দেবে। ■প্রশ্ন? যে সব কোম্পানির(‘A’) বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য আপনারা(‘C’) টাকা পাচ্ছেন সেই কোম্পানিগুলি(‘A’) কি এতটাই মূর্খ বা বোকা যে তাদের উদ্দেশ্য সফল হোক বা না হোক শুধু মাত্র বিজ্ঞাপন ক্লিক করলেই তারা মোটা টাকা দিয়ে দেবে? এটা কি বাস্তবে সম্ভব, কোম্পানির পণ্য বা তাদের দেওয়া মেসেজের প্রচার হোক বা না হোক সেই কোম্পানির অ্যাডে ক্লিক করলেই টাকা পাওয়া যায়? যে কোম্পানিগুলি(‘A’) বিজ্ঞাপনের প্রচারের জন্য এত হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করছে তাদের কি টেকনিক্যাল বিষয়টি (মানে, বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ‘B’ কোম্পানিগুলি তাদেরকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে সেটা তারা বুঝতে পারবে না) দেখার মতো কোনও পদ্ধতি নেই?
➥বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি (‘B’) বাজার ধরার জন্য প্রথমের দিকে সমস্ত ক্লায়েন্টদেরই(‘C’) ওই সস্তার নিয়মে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে টাকা দিয়ে দেয়। যখন দেখে, প্রচুর মানুষের কাছ থেকে(‘C’) সিকিউরিটি মানি বাবদ প্রচুর টাকা কোম্পানির(‘B’) ঘরে চলে গিয়েছে তখনই এই ধরনের কোম্পানিগুলির(‘B’) হদিশ পাওয়া যায় না।
➥ছোট বেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমরা যে সমস্ত বই পড়েছি, সেখান থেকেই নানা গল্পের মাধ্যমে নানা উদাহরণ ও ইঙ্গিত দেওয়া রয়েছে, রাতারাতি বা শর্টকার্টে ধনী হওয়ার কোনও নিয়ম নেই। আর এই ভাবে বিজ্ঞাপন ক্লিক করে যদি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা নয়, ৩-৪হাজার টাকাও আয় করা যেত তাহলে ভারতের বহু পরিবারের দুশ্চিন্তা কমে যেত।
তাই আমার অনুরোধ, এই ধরনের কোম্পানিতে টাকা দিয়ে নাম লেখানোর আগে বেশ কয়েক বার এর বাস্তবতা নিয়ে একটু ভাবুন। কারণ, পাঁচ-দশ হাজার টাকার মূল্যও নেহাত কম নয়!



💬কাজলকান্তি কর্মকার || রাজ্যের প্রথম শ্রেণীর একটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক
ঘাটাল || পশ্চিম মেদিনীপুর
M&W: 9933066200
eMail: ghatal1947@gmail.com
FB:  https://www.facebook.com/kajalkanti.karmakar


Comments

Popular posts from this blog

DigiPIN ডিজিপিন—নতুন ভারতের ঠিকানা!

রবীন্দ্র কৌশিক: ভারতের অবহেলিত বীর #Ravindra Kaushik

আগামী দিনে ‘যৌনকর্মী’ শব্দটা কি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে? #Prostitute